চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়ন ও আধুনিক নাগরিকসেবা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কানাডার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নগর উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) চসিক কার্যালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মেয়র এসব কথা বলেন। বৈঠকে চট্টগ্রামের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য খাতের উন্নয়নে কানাডার সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের আহ্বান জানান তিনি।
মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য প্রবেশদ্বার। এখানে যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করা সম্ভব। তিনি এ সময় সোলার এনার্জি, নার্সিং শিক্ষা এবং চামড়া শিল্প—এই তিনটি খাতে কানাডার সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চসিক এলাকায় যৌথ উদ্যোগে রুফটপ সোলার সিস্টেম, সোলার স্ট্রিটলাইট এবং বর্জ্য-থেকে-জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে কানাডা প্রযুক্তি স্থানান্তর, অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা দিতে পারে। এতে একদিকে নগরীর কার্বন নিঃসরণ কমবে, অন্যদিকে অবকাঠামোগত ব্যয়ও হ্রাস পাবে।
স্বাস্থ্য খাত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ও চসিকের স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে কানাডার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে নার্সিং ও প্যারামেডিক প্রশিক্ষণ চালু করতে পারে। কানাডিয়ান বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে কারিকুলাম প্রণয়ন, স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও অনলাইন সার্টিফিকেশন কোর্সে সহায়তা করতে পারেন, যা বাংলাদেশের নার্সদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দক্ষ করে তুলবে।
এছাড়া চামড়া শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, কানাডার সহযোগিতায় চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত লেদার প্রসেসিং ও রপ্তানি অঞ্চল গড়ে তোলা গেলে দেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পরিবেশবান্ধব এই শিল্পাঞ্চল চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং মূল্য সংযোজিত উৎপাদনে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে।
জবাবে কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, “মেয়র যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন, সেগুলো বাস্তবসম্মত এবং সম্ভাবনাময়। কানাডার বহু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও দক্ষতা বিনিময়ে আগ্রহী। আমরা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের যাত্রায় অংশীদার থাকতে চাই।”
বৈঠকে কানাডার সিনিয়র ট্রেড কমিশনার ডেব্রা বয়েস, সিনিয়র পলিটিক্যাল কাউন্সিলর মার্কাস ডেভিয়েস, ট্রেড কমিশনার কামাল উদ্দিন এবং পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাডভাইজার নিসার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
চসিকের পক্ষ থেকে অংশ নেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী। এছাড়া প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কাদির এবং রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ইফতেখার মনির।