রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। রোববার (৪ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটি তিনটি সুপারিশসহ এই দাবি জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশ চলাকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বিচারবহির্ভূতভাবে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালায়। ‘অধিকার’ সরেজমিন তদন্ত করে ৬১ জনের বেশি নিহতের প্রমাণসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও, দেশের অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন বা জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে কোনো অবস্থান নেয়নি।
সংগঠনটি জানায়, তারা সরাসরি নিহতদের তালিকা প্রকাশ না করে একটি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানায় এবং সেই কমিশনের কাছে তালিকা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে সরকার কমিশন গঠনের পরিবর্তে ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট অধিকার-এর সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানকে গুম করে পরে রিমান্ডে নেয় এবং পরদিন অধিকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়ে গোপন নথি ও ডিভাইস জব্দ করে।
বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, ডিবি পুলিশের সহায়তায় বিভিন্ন সরকারি-সমর্থিত সংবাদমাধ্যমে নিহতদের নামে ভুয়া তালিকা প্রকাশ করে অধিকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়। এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী ২০০৯) অনুযায়ী আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে যথাক্রমে ৬২ ও ২৫ দিন কারাবন্দি রাখা হয়। প্রায় ১০ বছর বিচারিক প্রক্রিয়ার পর ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, তৎকালীন সরকার অধিকারকে দমন করতে এনজিও ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে হয়রানির চেষ্টা চালিয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদচ্যুতি ও ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর শাপলা চত্বরের ঘটনাকে ঘিরে আবারও আলোচনার সূত্রপাত হয়। ২০২৫ সালের ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
‘অধিকার’-এর তিন দফা সুপারিশ:
১. শাপলা চত্বরে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া।
৩. এ ঘটনায় দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।