১৯ জুলাই ২০২৪ — ইতিহাসের পাতায় রক্তিম অক্ষরে লেখা একটি দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দেশজুড়ে পালিত শাটডাউনে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক সহিংসতা, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগ। সেদিন স্বাভাবিক জনজীবন একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
রাজধানীর শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিকবার সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা ঢাকার মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তাল হয়ে ওঠে যে সরকার ওই রাতেই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করে।
আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী, এদিন সংঘর্ষ ও সহিংসতায় অন্তত ৫৬ জন নিহত হন এবং কয়েক শতাধিক আহত হন। শহরজুড়ে ছিল শোক, আতঙ্ক ও ক্ষোভের ছায়া।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা আরও বাড়ে, বিশেষ করে যখন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে তার কার্যালয় থেকে ‘মিথ্যা মামলা’ দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিজভীর গ্রেপ্তারের খবরে আন্দোলনে আরও আগুন লাগে, এবং দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।
সেদিন বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নতুন ৯ দফা দাবি পেশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ, এবং শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনের অঙ্গীকার।
আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম স্পষ্ট জানান, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
দিনের শেষে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের পক্ষে অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ ও হাসিব আল ইসলাম। বৈঠকে তারা ৮ দফা লিখিত দাবি পেশ করেন।
১৯ জুলাইয়ের এই দিনটি শেষ হয় দেশজুড়ে আতঙ্ক, শোক, ও জনরোষের মধ্য দিয়ে— যা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত ও বেদনাবিধুর দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইলো।