Ridge Bangla

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ফিরে আসার এক অনন্য গল্প

দেশে যখন ফুটবল আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকে ইউরোপের লিগ ও বিদেশি খেলোয়াড়দের ঘিরে, তখন অনেকটাই আড়ালে পড়ে যায় আমাদের নিজস্ব ফুটবল ঐতিহ্য। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে ফুটবলের সূচনাই হয়েছিল বিশ্বমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে তাল মিলিয়ে। সেই ইতিহাসের গর্বিত অংশ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব—যাদের শুধু মাঠে নয়, বাঙালির আবেগ-সংস্কৃতির গভীরেও রয়েছে শক্ত অবস্থান।

১৯৩৬ সালে কলকাতার মোহামেডানের ঢাকাস্থ শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ক্লাবটি। উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম যুবসমাজকে খেলাধুলার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ করা। দেশভাগের পর ঢাকার ফুটবলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, মোহামেডান সেই শূন্যতা পূরণে বড় ভূমিকা রাখে। মোহাম্মদ শাহজাহানের আগমনে ক্লাবের ভিত আরও শক্ত হয়, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ওয়ান্ডারার্সের আধিপত্য।

সত্তর, আশি ও নব্বই দশকে মোহামেডান ছিল ঢাকার ফুটবলের একচ্ছত্র রাজা। ‘আবাহনী বনাম মোহামেডান’ ম্যাচ মানেই ছিল উৎসব—মাঠে উত্তেজনা, গ্যালারিতে আবেগ আর শহরজুড়ে সামাজিক বিভাজনের প্রতিচ্ছবি। সেই সময়ের সংবাদপত্রে শিরোনাম হতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

তবে ২০০২ সালের পর ক্লাবটির পতনের শুরু হয়। মাঠের পারফরম্যান্সে ভাটা, অর্থনৈতিক সঙ্কট, প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা—সব মিলিয়ে মোহামেডান হারিয়ে ফেলে তাদের ঐতিহ্যবাহী রূপ। ২০১৯ সালে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে ক্লাবের মর্যাদা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তবু সব শেষ হয়ে যায়নি। ২০২৩ সালে ফেডারেশন কাপ জয়ের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেয় মোহামেডান। কোচ আলফাজ আহমেদের অধীনে নতুনভাবে দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়—আসে পেশাদারিত্ব, পরিকল্পনা ও লক্ষ্যভিত্তিক ম্যানেজমেন্ট। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ঘরে তোলে ‘কালো-সাদা’রা।

আবাহনীর পরাজয়ের পর মোহামেডান সমর্থকদের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু, কণ্ঠে ছিল স্লোগান—“এভাবেও ফিরে আসা যায়।” এই জয় কেবল একটি ট্রফির নয়; এটি আত্মমর্যাদা, ঐতিহ্য এবং অবিচল লড়াইয়ের প্রতীক। ২২ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মোহামেডান আবারও প্রমাণ করেছে—ইতিহাসকে থামানো যায়, তবে মুছে ফেলা যায় না।

মোহামেডান ফিরে এসেছে—আত্মবিশ্বাস নিয়ে, ঐতিহ্য নিয়ে, সম্মান নিয়ে।

আরো পড়ুন