Ridge Bangla

মাউশিকে দু’ভাগ করার প্রস্তাবে কর্মকর্তা-শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ, শিক্ষায় ঝড়

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) ভেঙে দুটি নতুন অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির ২৭ অনুচ্ছেদে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের জন্য পৃথক অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ ছিল। সেই আলোকে মাধ্যমিক শাখার জন্য ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ এবং কলেজ পর্যায়ের জন্য ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ করার কথা বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুক্তি—মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের কার্যক্রম আলাদা করে পরিচালনা করলে প্রশাসনিক কাঠামো আরও গতিশীল হবে।

দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক, আর্থিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আনতে গত ৩ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে এমন প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার ও সদ্য অপসারিত শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। তবে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাবকে ভিন্নভাবে দেখছেন। তাদের অভিযোগ, নতুন অধিদপ্তর করে কলেজ অংশটুকু দখল করতে চাইছেন আমলারা। পূর্বে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের পর শীর্ষ পদগুলো আমলারা দখল করেছেন উল্লেখ করে তারা বলছেন, বিতর্কিত ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাও বিতর্কিত। কারণ সেই নীতির কোনো সুপারিশ বিগত ১৫ বছরে বাস্তবায়ন হয়নি। এটি হলে শিক্ষা খাতের সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন প্রস্তাবের পর শিক্ষা ক্যাডারে ঝড় উঠেছে।

দুটি অধিদপ্তর করার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাউশির আওতায় বর্তমানে ৯টি বিভাগীয় কার্যালয়, ৬৪টি জেলা শিক্ষা অফিস, ৫১৬টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, ৬৬৬টি সরকারি কলেজ, ৭০৬টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১০৪টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২১ হাজার ২৩২টি, যার মধ্যে ১ হাজার ৫১৪টি প্রতিষ্ঠান স্কুলের পাশাপাশি কলেজ পরিচালনা করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও কর্মমুখী করতে ২০১৫ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর নামে আলাদা একটি অধিদপ্তর করা হয়। এর আগে মাদ্রাসাগুলোর প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম মাউশির বিশেষ শাখার মাধ্যমে পরিচালিত হতো। দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। পৃথক অধিদপ্তর করার পর মাদ্রাসাগুলোর প্রশাসনিক ও একাডেমিক গতি বেড়েছে। তবে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অধিদপ্তরটির মহাপরিচালক, পরিচালকসহ শীর্ষপদগুলো আমলাদের দখলে চলে গেছে। এটি শিক্ষাব্যবস্থায় সমন্বয়হীনতা তৈরি করবে এবং শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের কাজের ক্ষেত্র সীমিত করে ফেলবে।

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ২০১০ সালের শিক্ষানীতিটি বিতর্কিত। এই নীতির কোনো কিছু বাস্তবায়ন না হলেও শুধু অধিদপ্তর করার চেষ্টা সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। নীতিটি আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, বর্তমান সরকার যদি পতিত সরকারের সুপারিশ আমলে নিয়ে মাউশিকে ভাগ করে, তাহলে শিক্ষা খাতের সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন