রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ২২ জন নিহত এবং অন্তত ১৭১ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সর্বশেষ সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, দুর্ঘটনায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি ৮ জনের কেউ মারা যাননি। তবে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৭০ জন আহত, এর মধ্যে ৪ জন নিহত। ঢাকা মেডিকেলে ৩ জন আহত, ১ জন নিহত। সিএমএইচ-এ ১৭ জন আহত, ১২ জন নিহত। কুর্মিটোলায় ১ জন আহত, ২ জন নিহত। লুবনা হাসপাতালে ১১ জন আহত, ২ জন নিহত। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০ জন আহত, ১ জন নিহত এবং উত্তরা ক্রিসেন্টে ১ জন আহত হয়েছেন, তবে মৃত্যু হয়নি। সব মিলিয়ে ১৭১ জন আহত ও ২২ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান জানান, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮ জনের মধ্যে অন্তত ২৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানায়, ছুটির সময় বিমানটি আকাশে অস্বাভাবিকভাবে উড়ছিল এবং হঠাৎ মাইলস্টোন স্কুলের ভবনের ছাদে আঘাত করে নিচে পড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জানায়, প্রশিক্ষণ চলাকালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে পাইলট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর জনবহুল এলাকা এড়িয়ে নামার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণ হারান। তিনি সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে মারা যান।
ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনী উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। বহু আহতকে উত্তরা, কুর্মিটোলা ও ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। আটকে পড়া শিক্ষার্থী ও কর্মীদের উদ্ধার করা হয় কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায়।
দুর্ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানান এবং সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তার নির্দেশ দেন। সরকার ২২ জুলাই মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পেছনে যান্ত্রিক ত্রুটি প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ঘটনার ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে পড়ায় সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রক্তদানের জন্য সাধারণ মানুষ হাসপাতালে ভিড় করেছেন এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা现场 পরিদর্শন করেছেন।