Ridge Bangla

মস্কো-ওয়াশিংটন উত্তেজনা; সাথে বাড়ছে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা

আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গনে আবারও ভেসে উঠেছে উত্তেজনার গাঢ় ছায়া। সামরিক শক্তি প্রদর্শন এবং পাল্টাপাল্টি অবস্থানের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বেড়ে চলেছে কৌশলগত সংঘাতের ঝুঁকি। বিশেষত, রাশিয়ার জলসীমার কাছাকাছি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—যা বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক ও শুল্ক বিরোধের প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ ঠাণ্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের অন্যতম বড় সামরিক উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আসে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের এক উস্কানিমূলক মন্তব্যের পরই। অনেকের দৃষ্টিতে এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে এক নাটকীয় মোড়।

তবে সমালোচনার মুখে ট্রাম্প দাবি করেন, এটি কোনো আগ্রাসী কৌশল নয় বরং “প্রয়োজনীয় সতর্কতা।” তার ভাষায়, “যুক্তরাষ্ট্র কোনো যুদ্ধ চায় না, তবে হুমকি আসলে চুপ করে বসে থাকারও সুযোগ নেই।”

এই ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে—সমুদ্রের নিচে কে বেশি শক্তিশালী? মার্কিন নৌবাহিনীর ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো গোপনে চলাচলে সক্ষম এবং যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। ‘বুমার’ নামে পরিচিত এসব সাবমেরিন বর্তমানে মার্কিন বহরে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ১৪টি, যেগুলো মেরামত ছাড়াই প্রায় ১৫ বছর টহলে থাকতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে তিন শ্রেণির পারমাণবিক চালিত ফাস্ট অ্যাটাক সাবমেরিন পরিচালনা করে—ভার্জিনিয়া-ক্লাস, সিউলফ-ক্লাস এবং লস অ্যাঞ্জেলেস-ক্লাস—যেগুলো শত্রু জাহাজ খুঁজে ধ্বংস করতে দক্ষ।

অন্যদিকে রাশিয়ার রয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাবমেরিন বহর—সংখ্যায় প্রায় ৬৪টি। এর মধ্যে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন, যেমন বোরেই-ক্লাস ও ডেল্টা আইভি-ক্লাস। এ ছাড়াও ইয়াসেন-ক্লাস সাবমেরিন রয়েছে, যেগুলো তুলনামূলক ছোট আকারের, কম সংখ্যক ক্রু দ্বারা চালিত এবং স্থল ও সমুদ্রে লক্ষ্যবস্তুতে দূরপাল্লার হামলার জন্য প্রস্তুত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি কেবল অস্ত্র প্রদর্শনের লড়াই নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ভবিষ্যৎ নিয়েও জটিল প্রশ্ন তুলছে। তারা সতর্ক করছেন—বিশ্ব যেন আরেকটি পরমাণু উত্তেজনার নতুন যুগে প্রবেশ না করে।

তাদের মতে, বর্তমান সময়ে প্রয়োজন কৌশলগত সংযম, কার্যকর কূটনৈতিক পুনরুজ্জীবন এবং পারমাণবিক উত্তেজনা প্রশমনের বাস্তবমুখী উদ্যোগ। অন্যথায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

আরো পড়ুন