Ridge Bangla

মনোবলহীন পুলিশের মনোযোগ কমছে না দুর্নীতিতে, আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ

বাংলাদেশ পুলিশের যেন কোন পরিবর্তনই হয়নি। আগে যে ব্যবসায়ীকে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দিতে হতো, এখন তাকে দিতে হচ্ছে ৫ লক্ষ টাকা। গত ২৬ জুলাই সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কথা বলেছিলেন।

এই কথা যে নিছক কোনো বক্তৃতা ছিল না তা ফুটে উঠেছে বর্তমান সময়ে পুলিশের নানা কর্মকাণ্ডে। গত বছর ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফলে ৫ আগস্ট তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সুযোগ সন্ধানী ও দুষ্কৃতিকারীদের হামলায় দেশের যে সকল প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় দেশের পুলিশ বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট থানগুলো।

থানার অস্ত্র লুটপাট, ভাঙচুর, হামলা-অগ্নিসংযোগ, ভীতি ও সন্ত্রাসে কয়েক দিন কার্যত পুলিশ শূন্য ছিল দেশের বেশিরভাগ এলাকা। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পুলিশ বাহিনীর মনোবল যে পুরোপুরি ফিরেনি তা অকপটে স্বীকার করেছে সরকার।

এই দুরবস্থার মধ্যেও এখনো পুলিশের একটি অংশ দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে সরে আসেনি, এমনটাই উঠে এসেছে বিভিন্ন পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিবেদনে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত দেড় বছরে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩২৮টি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং ১৭৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন জরিপে পুলিশের সেবা পেতে ঘুষ দেওয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে দেখা গেছে, সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন প্রায় ৬২ শতাংশ ভুক্তভোগী। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের গবেষণায় এই হার আরও বেশি, যা প্রায় ৭৪.৫ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, মামলা ব্যবসা, রিমান্ডে অর্থ আদায়, সড়কে চাঁদাবাজি এবং অপরাধীদের সঙ্গে আঁতাত- এসব দুর্নীতি এখন কাঠামোগত রূপ পেয়েছে। ফলে এই বাহিনীর উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

সড়ক-মহাসড়ক ও পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, নগর এলাকায় ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান থেকে দৈনিক টাকা আদায়- এই দুটি খাতকেই পুলিশের বড় দুর্নীতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অতি সম্প্রতি আমাদের প্রকাশ করা “সড়কপথে চাঁদাবাজি, হাইওয়ে পুলিশের একাধিক সদস্য নজরদারিতে” শিরোনামের খবরে সড়ক পথে পুলিশের দুর্নীতির এই চিত্র তুলে ধরা হয়।

হকার্স ফেডারেশন জানায়, শুধু ফুটপাত থেকেই বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়।

পুলিশের অপর্যাপ্ত বাজেট, অভ্যন্তরীণ নজরদারির দুর্বলতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থার অনুপস্থিতি দুর্নীতি বৃদ্ধি করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ডিজিটাল জিডি ও অনলাইন সেবার ঘোষণা থাকলেও সেসব বাস্তবায়ন ও প্রয়োগে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। যার ফলে পুলিশের দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তারা।

দুর্নীতি দমনে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার পদায়নে প্রথমবারের মতো লটারি পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য বদলি বাণিজ্যসহ নানা বিতর্ক থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে মুক্ত রাখা। পরবর্তী ধাপে থানার ওসিদের পদায়নও একই পদ্ধতিতে করা হবে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, নিরপেক্ষ ও কার্যকরী পুলিশিং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে লটারিকে কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তবে পর্যালোচকদের মতে, টেকসই পরিবর্তন আনতে হলে নীতিগত সংস্কার ও কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে: ৫৪

আরো পড়ুন