ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী ভোপালে সদ্য নির্মিত একটি রেলওভার ব্রিজ ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও গণবিক্ষোভ। ঐশবাগ এলাকায় নির্মিত এই ব্রিজটি ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে গঠিত হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে তা নিয়ে ব্যাপক কৌতুক, প্রশ্ন ও উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ বলছেন, “এই ব্রিজে কি সার্কাস হবে?” আবার কেউ রসিকতা করে লিখেছেন, “এখানে গাড়ি নয়, হেলিকপ্টারই চলবে ভালোভাবে।”
এই অস্বাভাবিক নির্মাণ নিয়ে দেশজুড়ে হাস্যরস ছড়ালেও বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব সরাসরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ৭ জন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন চিফ ইঞ্জিনিয়ারও। এ ছাড়া এক অবসরপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১৮ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই ব্রিজটি মহামাই কাবাগ, পুষ্পা নগর এবং স্টেশন এলাকা থেকে নিউ ভোপালের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়। নির্মাণ শেষ হলে এই ব্রিজটির মাধ্যমে প্রায় তিন লাখ মানুষ উপকৃত হওয়ার কথা ছিল। তবে ৯০ ডিগ্রি বাঁকের মতো একটি ঝুঁকিপূর্ণ নকশা কীভাবে অনুমোদন পেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রকৌশল বিশেষজ্ঞরাও।
চলতি জুন মাসের শুরুর দিকে ব্রিজটির কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট স্থানে সেতুটি হঠাৎ করেই ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁক নিয়েছে, যা যেকোনো যানবাহনের চলাচলের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় কটাক্ষ, বিদ্রূপ এবং সমালোচনার ঢল।
মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব টুইটারে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানান, “ঐশবাগ রেলওভার ব্রিজ নির্মাণে মারাত্মক অবহেলা ও গাফিলতি হয়েছে। এটি সাধারণ জনগণের জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি গুরুতর ইস্যু।” তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির নকশা প্রণয়নকারী ‘ডায়নামিক কনসালট্যান্ট’ এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘পুনীত চাড্ডা’-কে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
সরকার জানিয়েছে, ব্রিজটি আপাতত জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে না। নকশায় পরিবর্তন আনতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা বিকল্প পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে।
এদিকে প্রকৌশল বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ভূমির সীমাবদ্ধতা এবং নিকটবর্তী মেট্রো স্টেশনের অবস্থান বিবেচনায় রেখেই এমন তীক্ষ্ণ বাঁক রাখতে বাধ্য হয়েছেন তারা। তাদের মতে, আরও কিছু জমি পাওয়া গেলে বাঁকটি অনেকটাই স্বাভাবিক করা সম্ভব হতো।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঝুঁকিপূর্ণ নকশা কখনোই কোনো পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ ধরনের প্রকল্পে জনগণের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ দুর্যোগের সম্ভাবনা আগে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
বর্তমানে এই ব্রিজ ঘিরে মধ্যপ্রদেশ সরকারের প্রকৌশল তদারকি ও নগর পরিকল্পনা নিয়ে দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে। তদন্ত ও পুনর্গঠনের কাজ কীভাবে সম্পন্ন হয় এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কী চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন দেশবাসী।