Ridge Bangla

ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের ইতিহাস

পেহেলগাম-কাণ্ডে অস্থির হয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি। সেখানে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের নিহত হওয়ার পর থেকে উত্তাল চারিদিক। যুদ্ধের ক্ষণ গুণছেন অনেকে। কারও মতে, পারমাণবিক শক্তিধর দেশ দুটি খুব শীঘ্রই অংশ নিতে চলেছে যুদ্ধে। চলছে এর প্রস্তুতি। কিন্তু, এবারই কি প্রথম? মোটেই না। স্বাধীনতার পর থেকে নানা ইস্যুতে, যার অধিকাংশই ছিল কাশ্মীরকেন্দ্রিক, ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে অসংখ্যবার।

যেখান থেকে শুরু…

ভারতবর্ষকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়ে যায় ব্রিটিশরা। ১৯৪৭ সালে জন্ম নেয় স্বাধীন দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। ধর্মের ভিত্তিতে হয় দেশভাগ। মুসলিমরা পায় নিজেদের দেশ, পাকিস্তান। হিন্দুদের ভূমি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়ায় ভারত। সবই ঠিকঠাক ছিল। বাধ সাধে কাশ্মীর। একটা ভূখণ্ড অস্তিত্ব সংকটে দাঁড়িয়ে থাকে। আর তার কর্তৃত্ব দাবি করে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশ। অমীমাংসিত যুদ্ধে কেটেছে ৭৮ বছর। আসুন, ইতিহাসের পাতা উল্টে ভারত-পাকিস্তানের উল্লেখযোগ্য দ্বন্দ্বগুলোতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ

‘৪৭ এর দেশভাগের পর যেখানে শান্তির আশা করছিল সবাই, সেই বছরই শুরু হয় নতুন ঝামেলা। ১৪ ও ১৫ আগস্টের স্বাধীনতার পর অক্টোবরে শুরু হয় প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর থেকে পরের বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত হওয়া সংঘাত জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে যুদ্ধে পরিণত হয়নি। শান্তির বার্তা নিয়ে জাতিসংঘ চায় সমাধান, যার সূত্র ধরে কাশ্মীরকে দুই ভাগ করা হয়। মাঝখানে টেনে দেওয়া হয় ‘লাইন অব কন্ট্রোল।’ পাকিস্তানের কাশ্মীর অংশে আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিত বালতিস্তান এবং ভারতের অংশে থাকে কাশ্মীর ভ্যালি, জম্মু ও লাদাখ। চুক্তি হলেও শান্তি আসেনি কখনোই। কাগজে-কলমে ভাগ থাকলেও দুই দেশের নজর সবসময় থেকেছে অখণ্ড কাশ্মীরের প্রতি।

কচ্ছ যুদ্ধ

সীমানা নিয়ে সংঘাত পরিণত হয় যুদ্ধে। ১৯৬২ সালে চীনের কাছে সেই যুদ্ধে হার মানে ভারত। পাকিস্তানের মনে হয়েছিল, এবার বুঝি ভারতের শক্তি কমেছে। বিভিন্ন রণকৌশল সাজিয়ে ১৯৬৫ সালে হামলা করে পাকিস্তান, যা কচ্ছ যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৯৬৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীরা ভারত নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পাহারা দিতে শুরু করে। ১৯৬৫ সালের ৮ এপ্রিল দুই দেশই ‘কচ্ছ’ অঞ্চলে একে অপরের সীমান্ত চৌকির ওপর আক্রমণ চালায়। লাইন অব কন্ট্রোলে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে সৈন্যরা। মূলত, চীনের কাছে ভারতের হারে পাকিস্তান ভেবেছিল, ভারতের কাছ থেকে কাশ্মীর ছিনিয়ে নেওয়ার এটাই মোক্ষম সুযোগ। যদিও ১৯৬৫ সালের জুন মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনের মধ্যস্থতায় সংঘর্ষ বন্ধ হয়। ইতিহাসের পাতায় আরেকটি অমীমাংসিত দ্বৈরথ হিসেবে রয়ে যায় কচ্ছ যুদ্ধ।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

Image courtesy: Liberation War Museum BD

সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, লড়াই- সবটাই বাংলাদেশের অধিবাসীদের। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ এই দেশের আপামর জনতা। তবু ভারত এটি নিজেদের যুদ্ধ বলে চালিয়ে দিয়েছে। ভারতের মতে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের আরেকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়; যাতে জয়লাভ করে ভারত, জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। অথচ, স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষদিকে এসে ভারত অংশ নেয় সম্মুখ সমরে। এর আগের পুরোটা পথ বাংলাদেশ একাই তৈরি করেছিল। হ্যাঁ, ভারত আমাদের সহযোগিতা করেছে। কিন্তু, পথ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জনগণের রক্তেই।

কার্গিল যুদ্ধ

১৯৬৫ সালের কচ্ছ যুদ্ধ কিংবা ‘৭১ এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম; এরপর দীর্ঘ সময় কেটেছে। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব আবার শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, কার্গিলে। যথারীতি কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তাল হয় বৈরি দুই ভূখণ্ড। ১৯৯৯ সালের ৩ মে শুরু হওয়া সেই যুদ্ধ চলে ২৬ জুলাই পর্যন্ত। টানা তিন মাস ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের দ্রাস-কার্গিল সেক্টরে চলা লড়াইয়ের ভারতীয়দের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক নাম ছিল ‘অপারেশন বিজয়।’ পাকিস্তানি সেনা ও কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দুই দেশের মধ্যে থাকা সীমান্তরেখা ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে। তাদের বের করতে ভারত বেছে নেয় যুদ্ধের পথ। মোটামুটি ৫০ দিনের এই যুদ্ধের দায় চাপানো হয় কাশ্মীরি স্বাধীনতাপন্থীদের ওপর।

পুলওয়ামা হামলা

Indian soldiers examine the debris after an explosion in Lethpora in south Kashmir's Pulwama district February 14, 2019.
Image: Younis Khaliq/Reuters

২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এক ভয়ানক হামলার শিকার হন ভারতীয় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) সদস্যরা। ভারতের নিরাপত্তাকর্মীদের বহনকারী একটি গাড়িবহর জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার লেথোপোড়া অতিক্রম করার সময় আত্মঘাতী বোমা হামলার শিকার হয়, যাতে প্রাণ যায় ৪০ জন সদস্যের। আহত হন আরও অনেকে। ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে নেয় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন জাইশ-ই-মোহাম্মদ। আর পাকিস্তান সরকার হামলার নিন্দা জানিয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত না থাকার ব্যাপারটি তুলে ধরে।

এসব ঘটনার বাইরে ভারত-পাকিস্তান বিভিন্ন সময় জড়িয়েছে সংঘাতে। সেসবের স্থায়িত্ব কখনও কয়েক দিন, কখনও কয়েক ঘণ্টা ছিল। ২০১৬ সালে তেমনই একটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ঘটনা সবাই দেখতে পায়। উরি দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নামে পরিচিত সেটি, যা নিয়ে পরবর্তীতে বানানো হয়েছে সিনেমা। অবশ্য ভারতের প্রায় সবগুলো লড়াই নিয়েই দেশটিতে সিনেমা নির্মিত হয়েছে।

আরো পড়ুন