Ridge Bangla

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করার উদ্যোগ ইউজিসির

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ যুগোপযোগী করতে নতুন করে সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সংশোধিত আইনের খসড়ায় আইন লঙ্ঘনে শাস্তি বাড়ানো, উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা নির্ধারণ, ট্রাস্টি বোর্ডে পরিবর্তন আনাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে। ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এবং সংশোধিত আইনের খসড়া পর্যালোচনা করে এসব তথ্য জানা গেছে।

এরই মধ্যে ইউজিসি আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, আইনটি সংশোধনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। খুব শিগগির তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় আইন লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এই জরিমানার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা।

খসড়া প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি ও ভবনের শর্ত আরও কঠিন করা হয়েছে। এখন একটি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ২৫ হাজার বর্গফুট ভবন যথেষ্ট হলেও সংশোধিত খসড়ায় তা বাড়িয়ে এক লাখ বর্গফুট করা হয়েছে। একই সঙ্গে জমির পরিমাণ বাড়িয়ে পাঁচ একর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে ২০২৪ সালের আগে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে এ শর্ত শিথিল থাকবে।

সংরক্ষিত তহবিল দ্বিগুণ করার প্রস্তাবও রয়েছে খসড়ায়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য এখন থেকে আট কোটি, অন্য মহানগরে পাঁচ কোটি এবং বাকি এলাকায় তিন কোটি টাকা তপশিলি ব্যাংকে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকবে।

অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী সনদ না নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ অনিয়ম রোধে আইনটি আরও কঠোর করা হচ্ছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, অনুমোদনের সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করতে হবে। সর্বোচ্চ ১২ বছরের মধ্যে সনদ না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হবে।

খসড়ায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের নতুন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। ২১ সদস্যের বোর্ডে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ বা শিক্ষানুরাগী থাকতে হবে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া ট্রাস্টি বোর্ডে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। প্রয়োজনে সরকার একজন পর্যবেক্ষকও মনোনয়ন করতে পারবে। পাশাপাশি ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না বা আর্থিক সুবিধাও নিতে পারবেন না।

খসড়ায় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড আরও কড়াকড়ি করা হয়েছে। পিএইচডি ডিগ্রি বা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে যে কোনো একটিতে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে। থাকতে হবে কমপক্ষে ২০ বছরের শিক্ষকতা এবং স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা। কোনো পর্যায়েই তৃতীয় শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে না। উপাচার্য হিসেবে কেউ দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।

খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হতে পারবে না। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ইউজিসি অনুমোদিত বেতন কাঠামো অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সংশোধিত আইনে সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার স্থাপন করা যাবে না। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের ভর্তি কার্যক্রম কিংবা প্রচার চালাতে পারবে না।

খসড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে ‘জাতীয়’ বা ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ন্যূনতম তিনটি অনুষদ থাকা বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর সিন্ডিকেট সভা আয়োজনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশে ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে ১০৭টিতে পাঠদান চলছে। বাকিগুলো নানা জটিলতায় বন্ধ। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিন লাখ ৪১ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

আরো পড়ুন