ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য প্রফেসর এমিরিটাস ড. এম শমশের আলী আর নেই। শনিবার (৩ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
তার বড় ছেলে জেহান আলী জানান, বাদ জোহর ধানমণ্ডির বায়তুল আমান মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করা শমশের আলী ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এমএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬১ ও ১৯৬৫ সালে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যথাক্রমে পরমাণু পদার্থবিজ্ঞান ও থিওরেটিক্যাল নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬১ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে। ১৯৬৫ সালে দেশে ফিরে ঢাকার আণবিক শক্তি কেন্দ্রে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭০ সালে তিনি আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক হন এবং ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। এছাড়া তিনি ১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য এবং ২০০২-২০১০ সাল পর্যন্ত সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতি ছিলেন।
গবেষণার পাশাপাশি তিনি একাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে Scientific Indications in the Holy Quran, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলমানদের অবদান এবং পবিত্র কোরআনে বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হরি প্রসন্ন রায় স্বর্ণপদকসহ বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক, জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক, আকরম খাঁ স্বর্ণপদক, মাওলানা ভাসানী স্বর্ণপদকসহ একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করেন।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান সমাজ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তাঁর মৃত্যুতে দেশ এক প্রজ্ঞাবান ও কৃতী বিজ্ঞানীকে হারালো।