স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও রক্তাক্ত দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্র ধরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও সংঘর্ষের ধারাবাহিকতায় এই দিনটি একটি নতুন মোড়ের সূচনা করে।
এই দিন ঢাকায় আন্দোলনের তিন প্রধান সমন্বয়ক—নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। একইভাবে সংগঠনের আরও দুই শীর্ষ নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহও গ্রেফতার হন। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এটি ছিল এক ভয়াবহ বার্তা।
অন্যদিকে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ব্লক রেইড’ নামে বিশেষ সাঁড়াশি অভিযানে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। র্যাব জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা ২৯০ জনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও আন্দোলনকারী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করে, এসব গ্রেফতার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক প্রতিশোধমূলক। র্যাবের দাবি, গ্রেফতারকৃতরা রাজধানী ও আশপাশে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ এবং সহিংসতার সঙ্গে জড়িত। তবে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পর্যবেক্ষকরা।
সিলেটেও আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় ১১টি মামলা হয় এবং ১৪৩ জনকে গ্রেফতার করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগরীতে কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেওয়া হয়, যেখানে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সাধারণ চলাচল কিছুটা সহজ হয়। তারপর আবার রাত থেকে কারফিউ কার্যকর করা হয় বলে জানান সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ।
এই দিন পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৯ জনে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, পুলিশ সদস্য এবং সাধারণ মানুষ। আন্দোলন, দমন ও সহিংসতার ত্রিমুখী সংকটে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অস্থিরতা ও শঙ্কা।
এই দিনটির ঘটনাপরম্পরা প্রমাণ করে, ২০২৪ সালের জুলাই শুধু রাজনৈতিক উত্তাপের মাস নয়—এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ংকর ও পরিবর্তনশীল একটি অধ্যায় হয়ে রয়ে যাবে।