Ridge Bangla

ফিরে দেখা রক্তাক্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলো | ২৫ জুলাই ২০২৪

২৫ জুলাই ২০২৪—কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে তৎকালীন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও প্রশাসনের সহায়তায় সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও গ্রেফতারের চরম রূপ নেয়। এই ঘটনায় হতাহতের ফলে সারাদেশে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে। ১৭ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৯ দিনেই পুলিশ সারাদেশে প্রায় ৫ হাজার জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেফতার হন ২ হাজার ২০৯ জন, চট্টগ্রামে ৭৩৫ জন, বরিশালে ১০২ জন, নরসিংদীতে ১৫৩ জন এবং সিলেটে ১২৮ জন। শুধু ২৫ জুলাইতেই ১২৮টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় ৪৫১ জনকে।

ঢাকায় সরকারি স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ২০১টি মামলা দায়ের হয়, যার আওতায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। আন্দোলনের নেতাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা কোনো সহিংসতায় জড়িত নয়; সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আন্দোলন দমন করতে এসব মামলা করছে।

২৫ জুলাই পর্যন্ত চলমান সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৩ জনে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গ কর্তৃপক্ষ জানায়, এ পর্যন্ত ৮৫টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত ৮টি লাশ দাফনের জন্য দেওয়া হয়েছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে।

এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চার ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। বিআইডব্লিউটিএ লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিলেও রেল কর্তৃপক্ষ আন্তঃনগর ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এক বিবৃতিতে জানান, এই আন্দোলন কেবল কোটা সংস্কারে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ছাত্র-নাগরিক হত্যা, গুম, মামলা প্রত্যাহার, নিরপরাধদের মুক্তি ও ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতির অবসানসহ বিভিন্ন দাবিতে দফাভিত্তিক কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক মহল থেকেও প্রতিক্রিয়া এসেছে। জাতিসংঘ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে সহিংসতা ও দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘ স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘জরুরি নয়’ এমন কর্মীদের বাংলাদেশ ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে।

সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কারফিউর সময়সীমা বাড়িয়ে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছে। তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীতে শুক্রবার ও শনিবার কারফিউ অব্যাহত থাকবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ২৮, ২৯, ৩১ জুলাই ও ১ আগস্টের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সরকার দাবি করে, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়নি, কেবল কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে।

বিএনপি, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এবং প্রবাসীরা কারফিউ প্রত্যাহার ও সহিংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন