২০২৪ সালের ২৯ জুলাই রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের কর্মসূচি ঘোষণা করে। সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণমাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠিয়ে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বার্তায় তিনি হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার না করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপহাসের প্রতিবাদ জানান এবং নয় দফা দাবি তুলে ধরেন।
কর্মসূচি ঘোষণার পর মধ্যরাত থেকেই শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তুলতে শুরু করেন এবং তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। অনেক তারকাও এতে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের প্রোফাইল ছবি পরিবর্তন করেন। মুহূর্তেই সব প্রোফাইল ছবি যেন রক্তে লাল হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, সরকার ৩০ জুলাই কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে কালো ব্যাজ ধারণ, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এদিন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিত। সমন্বয়কদের ‘জিম্মি’ করে বিবৃতি আদায়ের প্রতিবাদে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা ও লাঠিচার্জ হয়। ঢাকায় অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
দেশে দশম দিনের মতো কারফিউ চলছিল, যদিও দিনে কিছুটা শিথিলতা ছিল। র্যাবের হেলিকপ্টার টহল, সেনা ও পুলিশের কঠোর অবস্থান, এবং শহরজুড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়। হাইকোর্ট আন্দোলনের সমন্বয়কদের মুক্তি ও গুলি না চালানোর নির্দেশনার আবেদন গ্রহণ করে।
সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাবে একমত হয়। আইনজীবীদের মানববন্ধন থেকে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠনের ঘোষণা আসে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিহতদের সরকারি তালিকাকে অবিশ্বস্ত বলে উল্লেখ করেন।
গণতন্ত্র মঞ্চ ছয় দফা দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে রয়েছে কারফিউ প্রত্যাহার, সেনা প্রত্যাহার, ইন্টারনেট চালু, ও গুম-গ্রেপ্তার বন্ধ। শিক্ষকরা জুলাইয়ের ঘটনাকে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যা দিয়ে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান। টিআইবি সমন্বয়কদের ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে বিবৃতি নেওয়াকে ‘গর্হিত অপরাধ’ বলে মন্তব্য করে।
এদিকে ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তোলেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিহতদের বেশিরভাগই তরুণ শিক্ষার্থী।