শিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত প্রাথমিক শিক্ষা খাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে, যা শিশুদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
চলতি বছরে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬,২৪৭টি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ, ১৫,১৪৪টি ওয়াশব্লক, ৪,২৬১টি সীমানা প্রাচীর এবং ৬,১৪০টি নলকূপ স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে ৩০টি নতুন বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হবে। কক্সবাজারে দশতলা বিশিষ্ট একটি লিডারশীপ ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণ শেষ হয়েছে, যেখানে শিগগিরই কার্যক্রম শুরু হবে।
শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ হবে। সহকারী শিক্ষক, শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত বিষয়ে ১৬,০২৭টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। প্রধান শিক্ষকের ২,৩৮২টি পদে বিসিএস (নন-ক্যাডার) থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চলতি অর্থবছরে ৭,১১৫ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাবেন এবং শিক্ষার্থীদের শিখন অবস্থা মূল্যায়নে বেইজলাইন সার্ভে পরিচালনা করা হবে।
২০২৫ সাল থেকে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করা হয়েছে। এর আওতায় ৮২,৫০০ শিক্ষার্থী বৃত্তি পাবে—৩৩,০০০ ট্যালেন্টপুল ও ৪৯,৫০০ সাধারণ বৃত্তি। প্রস্তাবিত বৃত্তির হার ট্যালেন্টপুলে ৭,৭০০ টাকা ও সাধারণ বৃত্তিতে ৫,৯০০ টাকা।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ৯ কোটি ২০ লাখ পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে ১ কোটি ৮৬ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮ কোটি ৪২ লাখ পাঠ্যপুস্তক বিতরণে ৬২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে ১৫০টি উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হবে, যা পরে ৩৪৯ উপজেলায় সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন ও স্থায়িত্বের জন্য পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি৫) শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ১৩টি নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জরাজীর্ণ বিদ্যালয়ের পুনর্নির্মাণ, মডেল বিদ্যালয় গঠন, মাঠ উন্নয়ন, চা বাগান এলাকায় বিদ্যালয় স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ সংযোগ এবং শিশু-বান্ধব শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ।
উপবৃত্তি কর্মসূচিতে ১ কোটি ১৪ লাখ শিক্ষার্থী উপকৃত হবে এবং এ খাতে ১,৬৭৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ১০টি পিটিআই-তে ১ বছর মেয়াদি প্রি-সার্ভিস প্রশিক্ষণ কোর্স চালু হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য গারো ও সাদরি ভাষায় প্রশিক্ষণসহ ২৭ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে ৩,০০০ ইন্টারএকটিভ ফ্ল্যাট প্যানেল সরবরাহ, ডিজিটাল কন্টেন্ট স্টুডিও নির্মাণ এবং আইপিএমএস সফটওয়্যার উন্নয়ন করা হবে। পিইডিপি৪-এর আওতায় শিক্ষার্থীদের আইকিউ টেস্ট চালু হবে এবং মাতৃভাষায় সহায়ক ডিজিটাল কনটেন্ট প্রস্তুত করা হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে ৩৫,৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে এসব উদ্যোগ শিক্ষাক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।