কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ভারতের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে বাণিজ্য স্থগিত, শিমলা চুক্তি বাতিল, আকাশসীমা বন্ধসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর একদিন আগে কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি কড়া পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে ছিল সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা। পাকিস্তান এই সিদ্ধান্তের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় শিমলা চুক্তি বাতিল, ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ এবং ভারতীয় মালিকানাধীন বা ভারত পরিচালিত সব ধরনের বিমানের জন্য আকাশসীমা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। একইসঙ্গে ভারতের সঙ্গে সব ধরনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানানো হয়, পাকিস্তান হয়ে কোনো তৃতীয় দেশের পণ্যও ভারতে প্রবেশ বা ভারত থেকে বের হতে পারবে না।
এক বিবৃতিতে পাকিস্তান জানায়, তারা ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। পাকিস্তানের মতে, এই চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া একটি বাধ্যবাধকতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং এককভাবে এটি বাতিল বা স্থগিত করার সুযোগ নেই। পাকিস্তান দাবি করে, সিন্ধু নদীর পানি দেশটির ২৪ কোটি মানুষের জীবন ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ পানি রক্ষায় তারা যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
ভারতের সিন্ধু নদীর পানি প্রবাহ বন্ধের হুমকিরও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ জানিয়েছে, নয়াদিল্লি যদি সিন্ধুর পানি প্রবাহে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে তার জবাব ‘পূর্ণ শক্তি প্রয়োগে’ দেওয়া হবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালের ২ জুলাই ভারতের হিমাচল প্রদেশের শিমলায় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টো ‘শিমলা চুক্তি’তে স্বাক্ষর করেন। এতে উভয় দেশ একে অপরের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের প্রতি সম্মান জানাতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।
পাকিস্তান এই চুক্তি বাতিল করার ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তীব্র উত্তেজনার দিকে মোড় নিয়েছে এবং যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কাও বাড়ছে।
