নোয়াখালী-৪ আসনের চারবারের সংসদ সদস্য, সাবেক এমপি একরামুল করিম চৌধুরী বর্তমানে কারাগারে বন্দি অবস্থায় থাকলেও তিনি সেখানে আছেন এমপিদের মতোই ভিআইপি সুবিধায়। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারের নির্দিষ্ট একটি রুমে তিনি নিজ খরচে টাইলস বসিয়েছেন, লাগিয়েছেন এসি।
কারাগারের দেয়া নিয়মিত খাবারের বদলে প্রতিদিন বাইরে থেকে তার জন্য খাবার আনা হয়। দিন-রাত যেকোনো সময় তার স্বজন ও অনুসারীরা সাক্ষাৎ করতে পারছেন, যা সরাসরি কারা আইন লঙ্ঘনের শামিল।
কারা সূত্র জানায়, ঈদে তিনি বন্দিদের মধ্যে টাকা বিতরণ করেন, গরু কোরবানি দিয়ে খাবার দেন। এমনকি কারারক্ষী থেকে কর্মকর্তারা পর্যন্ত তার অনুগত হয়ে পড়েছেন। একসময় পুরো নোয়াখালী এলাকাই ছিল তার প্রভাব বলয়ে। আর এখনো তিনি কারাগারে থেকেই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
অভিযোগ উঠলে এই বিষয় জানতে চাইলে কারা কর্তৃপক্ষ একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপাচ্ছেন। জেলার দাবি, টাইলস বসানোর কাজ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, এ বিষয়ে তারা কিছুই জানে না।
রাজনীতিতে দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এমপি হিসেবে একরাম দাপট দেখিয়েছেন। শোনা যায়, তার পাশের আসনের এমপি ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও নাকি তাকে ঘাটাতেন না। ক্ষমতার দাপট থাকলেও তার বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
পরিবারের সদস্যদেরও তিনি বিভিন্ন পদে বসান। স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান, ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাগ্নে পৌর মেয়র—সবকিছুই গড়ে তোলেন নিজের প্রভাব খাটিয়ে।
৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারতে পলায়নের সময় গা ঢাকা দেন নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীও। এরপর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাকে নোয়াখালী কারাগারে রাখা হয়।
সেখানে শুরু থেকেই ভিআইপি সুবিধা ভোগ করছেন তিনি। এমনকি আদালতে হাজির করার সময়ও প্রথমদিকে তাকে হাতকড়াও পরানো হতো না। স্থানীয়রা বলছেন, কারাগারের একটি সেলে তিনি যেন রাজপ্রাসাদের মতো অবস্থান করছেন। সেখানে বসেই তিনি এখনো জেলার ওপর প্রভাব খাটাচ্ছেন।