বাংলাদেশের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে না। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে সব ধরনের নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ হবে। পাশাপাশি, বর্তমানে কমিশনের হাতে থাকা ইভিএমগুলোর ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা নির্ধারণে একটি বিশেষ পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অষ্টম কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, “ইভিএম এখন থেকে আর কোনো নির্বাচনেই ব্যবহৃত হবে—না জাতীয় নির্বাচনে, না স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি পৃথক কমিটি গঠন করে ইভিএম ইস্যু নিষ্পত্তি করা হবে।”
ইসির তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী দেড় লাখ ইভিএম, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ছয়টি সফটওয়্যার, পাঁচটি যানবাহন এবং ৯,২০০টি র্যাক কেনা হয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দুটি পৃথক চুক্তিতে প্রায় ৪০ হাজার ইভিএম মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বর্তমানে এগুলো বিএমটিএফ এবং জেলা পর্যায়ের ভাড়াকৃত গুদামে সংরক্ষিত রয়েছে।
ইভিএম প্রকল্পে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৯৬ শতাংশ। বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৬.৪৮ শতাংশ।
বাংলাদেশে প্রথমবার ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের একটিতে পরীক্ষামূলকভাবে বুয়েটের তৈরি ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এরপর সীমিত আকারে ব্যবহৃত হলেও ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ইভিএমে ত্রুটি ধরা পড়ায় তা বন্ধ রাখা হয়। পরে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার আমলে পুনরায় ইভিএম ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০১৮ সালে সরকার দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প গ্রহণ করে, যার মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়নি।
যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিপুল পরিমাণ ইভিএম কেনা হয়, বাস্তবে কেবল ছয়টি আসনে এই যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়।