ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় প্রেম করে সামাজিক রীতি ভেঙে বিয়ে করায় এক নবদম্পতিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। রায়গাড়া জেলার কঞ্জামাঝিরা গ্রামে উত্তেজিত গ্রামবাসীরা ওই তরুণ-তরুণীকে গরুর মতো কাঠের জোয়ালে বেঁধে মাঠে হাল টানাতে বাধ্য করে। হাল টানার সময় তাদের পেছন থেকে ছড়ি দিয়ে মারতেও দেখা যায় কয়েকজনকে।
পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে তা ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার সৃষ্টি করে। নেটিজেনরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একে মধ্যযুগীয় বর্বরতা হিসেবে আখ্যা দেন। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ভারতের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
জানা গেছে, ওই তরুণ-তরুণী প্রেমের সম্পর্কে জড়ান এবং পরিবারের মতের তোয়াক্কা না করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, স্থানীয় রীতিতে কনের পিসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ হিসেবে ধরা হয়, অথচ নববধূ যে যুবককে বিয়ে করেছেন, তিনি তার দূরসম্পর্কের ফুফাতো ভাই। এই তথাকথিত ‘অপরাধে’ উত্তেজিত জনতা নবদম্পতিকে প্রকাশ্যে অপদস্থ করে।
শুধু শারীরিক শাস্তিই নয়, তাদের গ্রাম্য মন্দিরে নিয়ে গিয়ে ‘পাপমোচনের’ নামে শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ায়ও অংশ নিতে বাধ্য করা হয়। সমাজে এটি এক ধরনের চরম অপমানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
রায়গাড়া জেলার পুলিশ সুপার এস স্বাতী কুমার জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রামে পৌঁছায় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, একই জেলায় চলতি বছরের জানুয়ারিতেও ভিন্ন জাতের এক যুবককে বিয়ে করায় একটি পরিবারের ৪০ জন সদস্যকে জোর করে মাথা মুড়িয়ে ‘শুদ্ধিকরণ’ করানো হয়েছিল।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, সামাজিক রীতির নামে এ ধরনের গোঁড়ামি ও নিপীড়নের ঘটনা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায়শই ঘটে চলেছে। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান না নিলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরও বেশি সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হবে।