ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র কয়েকশ গজ দূরে, একটি সামরিক ঘাঁটিতে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে একটি ভয়ংকর গোপন বন্দিশালা। একসময় যা ছিল দেশজুড়ে গুজব, এবার তা বাস্তবে ধরা পড়লো তদন্তকারীদের অনুসন্ধানে।
বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত এই গোপন স্থাপনাটি প্রথম নজরে পড়ে, যখন একটি হঠাৎ গাঁথা দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়। ভেতরে মেলে জানালাবিহীন অন্ধকার ছোট ছোট কক্ষ এবং সদ্য ইট দিয়ে বন্ধ করে রাখা দরজা। তদন্তে দেখা যায়, এটি একাধিক গোপন জেলখানা, যা বছরের পর বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছে।
এই বন্দিশালার অস্তিত্বের প্রমাণ মেলে সরকারের কট্টর সমালোচক মীর আহমদ বিন কাসেমের স্মৃতিচারণ থেকে। তিনি আট বছর ধরে সেখানে আটক ছিলেন। বন্দিত্বের সময় তার চোখ বাঁধা থাকলেও বিমানের নিয়মিত শব্দ শুনে বুঝতে পারেন, এটি বিমানবন্দরের নিকটবর্তী।
তদন্তকারীরা সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধানে বের করে আনেন সামরিক নিয়ন্ত্রিত একটি স্থাপনার ভেতরে থাকা ওই গোপন ভবন, যেটি ছিল সবার চোখের সামনেই অথচ আড়ালে। ঘটনাটি সামনে আসে সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর। তদন্তের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত শতাধিক ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। অনেকেই এখনো নিখোঁজ, ধারণা করা হচ্ছে তাদেরকে গোপনে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা দাবি করছেন, এসব গোপন জেল পরিচালনা করত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা, যারা সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার নির্দেশে কাজ করতেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “গুম, নির্যাতন এবং হত্যার সব ঘটনার পেছনে সরাসরি নির্দেশনা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।”
এমন ভয়াবহ বাস্তবতার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন ছিল বছরের পর বছর ধরে ছায়ার আড়ালে লুকানো।