দেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিদিনই ঘটছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা; সড়কে ঝড়ে যাচ্ছে শতশত তাজা প্রাণ। নিহতদের মধ্যে একটি বড় অংশই বাইকার। ধারাবাহিকভাবে ঘটে এসব দুর্ঘটনা রোধে সরকার “নো হেলমেট, নো ফুয়েল” নীতি গ্রহণ করে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করলেও কার্যত তা তেমন ফল দিচ্ছে না।
কারণ প্রায়শই দুর্ঘটনার পরে দেখা যায় বাইকারদের মাথায় যেসব হেলমেট থাকে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নমানের ও অননুমোদিত হেলমেট ব্যবহারের কারণেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। মোটরযান চলাচল আইনে (৪৯-চ ধারা) যাত্রী ও চালক উভয়ের জন্য হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও সেখানে হেলমেটের মান বা ধরন সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া নেই।
ফলে বাজারে ভিড় করেছে প্লাস্টিকের তৈরি ১৫০ থেকে ৭০০ টাকামূল্যের নিম্নমানের হেলমেট। এসব হেলমেটে নেই কোনো শক-অ্যাবজরবার, সুরক্ষামূলক ফোম বা ইমপ্যাক্ট রেজিস্ট্যান্স প্রযুক্তি। এসব হেলমেট দুর্ঘটনার সময় মাথায় আঘাত পাওয়া থেকে বলতে গেলে কোনো সুরক্ষা দিতে পারে না।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিবহনবিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার ফেই ডেং বলেন, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করলে মাথায় গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) জানিয়েছে, গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো উন্নত হেলমেট টেস্টিং ল্যাব চালু হয়েছে। এখানে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হেলমেটেই বিএসটিআই লোগো দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হেলমেট যাচাই করি। বাজারে অননুমোদিত হেলমেট থাকার কথা নয়, তবে পুরনো আমদানি করা কিছু পণ্য রয়ে গেছে।
অন্যদিকে বাইকারদের অভিযোগ, তারা জানেন এই হেলমেট দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর নয়, কিন্তু পুলিশি জরিমানা এড়াতেই বাধ্য হয়ে এসব ব্যবহার করেন। রাইডশেয়ার চালক রতন জানান, যাত্রীরা হেলমেট পরতে চায় না; আবার না পরলে জরিমানা হয়—উভয় সংকট এড়াতে তাই কম দামি হেলমেটই পরে থাকি।
হেলমেট বিক্রেতারাও জানাচ্ছেন, ক্রেতাদের বেশিরভাগই কম দামি পণ্য বেছে নিচ্ছেন। ইস্কাটনের বাইকের পার্টস বিক্রেতা ইকবাল বলেন, ভালো মানের হেলমেটের দাম ৫ হাজার টাকার বেশি; কিন্তু অধিকাংশ চালক এক হাজার টাকার মধ্যেই তা কিনে ফেলেন। এসব হেলমেট পড়ে গেলে বা সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়।
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ চালক ও আরোহী শুধু আইনি বাধা এড়াতেই হেলমেট পরেন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের মতে, মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করলে মৃত্যুঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, চালকরা এখন হেলমেট পরে শাস্তি এড়াতে, নিরাপত্তার জন্য নয়।