Ridge Bangla

ছাত্র-জনতার উপর গুলি করা সেই অস্ত্রধারীরা এখন কোথায়?

গত জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামজুড়ে মিছিলের ওপর সরাসরি গুলি চালিয়েছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ। ১০ মাস পার হলেও সেই গুলিবর্ষণের মূল অস্ত্রধারীদের অধিকাংশ এখনও অধরা।

৪ আগস্ট সিআরবি–টাইগারপাস এলাকায় যুবলীগ ক্যাডার মোঃ শামীমকে শটগান হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। ওই হামলায় আহত হন সাইফুল ইসলাম আরিফ ও মোঃ হাসান। ৫৭ দিন হাসপাতালে থাকার পর ৩০ সেপ্টেম্বর মারা যান আরিফ এবং ২২ মে মারা যান হাসান।

১৬ জুলাই মুরাদপুরে গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামসহ তিনজন। ভিডিও ফুটেজে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে যুবলীগের ফিরোজ, এইচ এম মিঠু, জাফর ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দেলোয়ারকে। নেতৃত্বে ছিলেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।

১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দিন ফরহাদ, দেলোয়ার, তৌহিদ, যুবলীগ কর্মী ফরিদ, মিঠু ও ফিরোজ।

এসব ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবার ও ভুক্তভোগীরা প্রায় ৫৭টি মামলা দায়ের করেছেন চট্টগ্রাম শহরের ১৬টি থানার মধ্যে ৮টিতে। জেলা পুলিশের আওতাধীন এলাকায় আরও ৮টি মামলা হয়েছে। তবে এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪,৫০০ জনের অধিকাংশই তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী। শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা এখনও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০ জন অস্ত্রধারীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিও দেখে চিহ্নিত করেছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে যুবলীগের সোলায়মান বাদশা, হাসান, ফয়সাল, ফিরোজ, হাবিবুর রহমান আহনাফ ও আরও তিনজন। তবে মুখ্য শ্যুটার শামীম এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

উচ্চপর্যায়ের নেতৃত্বেও দায়বদ্ধতা নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী ছাড়া আর কেউ গ্রেপ্তার হননি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ড. হাছান মাহমুদ বর্তমানে বেলজিয়ামে, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল লন্ডনে, আ জ ম নাছির উদ্দীন অস্ট্রেলিয়ায়, বিপ্লব বড়ুয়া ও আমিনুল ইসলাম আমিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রনি, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অবস্থান অজানা।

আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এই অবস্থাকে “বিচারহীনতার সংস্কৃতি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, “গুলিবাজ কাউন্সিলর থেকে শুরু করে যুবলীগ ক্যাডার—কারোর বিচার হয়নি। সরকার খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার বলেন, “আমরা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, ফজলে করিম, সাবেক কাউন্সিলর জসিম, সন্ত্রাসী সাজ্জাদসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীকে ধরেছি। বাকিদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

তবে নিহত ও আহতদের পরিবার এবং মানবাধিকারকর্মীদের প্রশ্ন, “মূল অস্ত্রধারীরা ধরা না-পড়া পর্যন্ত কি সত্যিকারের ন্যায়বিচার সম্ভব?”

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন