রাজবাড়ীর ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের নির্মাণকাজ চাঁদাবাজির হুমকির কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে লিফট স্থাপনের কাজ কার্যত থমকে গেছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত ওই সভায় জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার সভাপতিত্ব করেন। সেখানে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জহিরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় দুষ্কৃতকারীরা নিয়মিত চাঁদা দাবি করছে এবং ঠিকাদারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, যার ফলে নির্মাণকাজে বারবার বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রকৌশলীর ভাষ্য অনুযায়ী, চাঁদা দেওয়ার পরও নতুন নতুন গ্রুপ এসে আবারও চাঁদা দাবি করছে। আতঙ্কে কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন ঠিকাদারেরা। এমনকি এসির তার চুরি হওয়া বা আউটডোর ইউনিট খুলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান তিনি।
চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গণপূর্ত বিভাগ একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি অস্ত্রধারী ৮–১০ জন ব্যক্তি নির্মাণসাইটে ঢুকে চাঁদা দাবি করে এবং মালামাল লুটের চেষ্টা চালায়। একইসঙ্গে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে এক চিঠিতে উল্লেখ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় এবং জেলা প্রশাসক, সেনা ক্যাম্প ইনচার্জ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়। পরদিন, ২১ জানুয়ারি পুলিশের সহায়তা চেয়ে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয় রাজবাড়ী সদর থানায়।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “রাজবাড়ীতে কোনোভাবেই চাঁদাবাজি বরদাস্ত করা হবে না।”
রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু বলেন, “হাসপাতালের মতো মানবিক প্রকল্পে চাঁদাবাজি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্পে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ৩ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে লিফট স্থাপনের কাজ চলমান, যা চাঁদাবাজদের হুমকির কারণে বিলম্বিত হচ্ছে।