পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলায় নির্মাণাধীন একটি গার্ডার ব্রিজের স্লাব ভেঙে খালে পড়ে গেছে চলাচল শুরুর আগেই। নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি, আর্থিক জ্বালিয়াতি এবং নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী কাজ না করার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার পূর্ব জলাবাড়ি গ্রামের ভাতুরিয়া খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। কার্যাদেশ অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছরেও তা পুরোপুরি শেষ হয়নি।
এর মধ্যেই স্লাবে ফাটল দেখা দেয়, যা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রকল্প পরিদর্শনে আসে কর্তৃপক্ষ। চলাচল শুরুর আগেই বিপত্তি দেখা দেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অপসারণ করে তা আবার সংস্কারের নির্দেশ দেয়া হয়। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সংস্কারের আগেই সেই স্লাব ভেঙে পড়ে খালের পানিতে।
২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর পিরোজপুর এলজিইডি পূর্ব জলাবাড়ি খ্রিষ্টানপাড়া থেকে মাদ্রা বাজার সড়কে দুটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণে কার্যাদেশ দেয় মেসার্স ইফতি ইটিসিএল নামক প্রতিষ্ঠানকে। একটির দৈর্ঘ্য ২২ মিটার এবং অপরটির ১৫ মিটার।
কাজটি পান পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দীন মহারাজের ভাই মিরাজুল ইসলাম। তবে তিনি নিজে কাজ পরিচালনা না করে সাব-কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করাচ্ছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার ঠিকাদার ও শ্রমিক বদল হওয়ায় কাজের গুণগতমান বজায় রাখা যায়নি।
প্রথমদিকে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার এবং সিডিউল অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় স্লাবে ফাটল দেখা দেয়। এরপর আরেক সাব-কন্ট্রাক্টর গার্ডার ছাড়াই ঢালাই দিয়ে কাজ চালিয়ে যান। কিছুদিনের মধ্যেই ঢালাই অংশে ত্রুটি ধরা পড়ে। যা নিয়ে স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে এলজিইডি ত্রুটিপূর্ণ অংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা দিপু মিস্ত্রি বলেন, “চার বছর ধরে এই ব্রিজের কাজ চলছে। বারবার লোক পাল্টানো হয়েছে। প্রথম থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সংস্কারের আগেই পুরো ছাদ খালের মধ্যে পড়ে গেছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাদের মতে, ঠিকাদার এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে ব্রিজ নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণের আগেই ধ্বংস হয়ে পড়েছে, যা জনদুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. রায়সুল ইসলাম জানান, নির্মাণে নিয়ম অনুসরণ না করায় স্লাব ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, মূল ঠিকাদার মিরাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় কাজ বাস্তবায়নে আরো সমস্যা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে মিরাজুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।