Ridge Bangla

গুম-হত্যায় অস্বীকৃতি: শেখ হাসিনার দপ্তরে পৌঁছাতো চিঠি, তদন্তে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

রাষ্ট্রীয় নির্দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিরোধী মত পোষণ করে লিখিত আপত্তি জানানো কিছু কর্মকর্তার চিঠি সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরে পৌঁছেছিল। সাম্প্রতিক এক অন্তর্বর্তী তদন্ত প্রতিবেদনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি ঘটনায় র‍্যাবের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বেআইনি হত্যার আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, “যদি তাকে মারতেই হয়, তাহলে আমাকে সরিয়ে দিন, আমি এটা পারব না।” পরবর্তীতে সেই বন্দীকে হত্যা করা হয়নি এবং ওই কর্মকর্তা চাকরিতে বহাল ছিলেন। তদন্ত কমিশনের মতে, এ ঘটনা প্রমাণ করে বেআইনি আদেশ প্রত্যাখ্যান করলেও তাৎক্ষণিক শাস্তি সবসময় হতো না—তবে দীর্ঘমেয়াদি হয়রানি ও পেশাগত প্রতিবন্ধকতা তাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠত।

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য, এই ধরনের দুইটি হাতে লেখা চিরকুট গণভবনে পরিত্যক্ত নথিপত্রের স্তূপ থেকে খুঁজে পান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক কর্মী। এর একটিতে র‍্যাবের এক কর্মকর্তা লিখেছিলেন, তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যায় অংশ নেবেন না। চমকপ্রদভাবে দেখা যায়, এসব ব্যক্তিগত চিঠিপত্র শেখ হাসিনা নিজ হাতে তাঁর ব্যক্তিগত ফাইলে প্রায় এক দশক ধরে সংরক্ষণ করেছিলেন।

কমিশনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এই সংরক্ষণ কেবল নির্দেশে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয় না, বরং তাৎপর্যপূর্ণভাবে তার সরাসরি তদারকি প্রমাণ করে। এছাড়া, ডিজিএফআই কর্মকর্তারা গুম সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতেন বলেও উঠে এসেছে।

যদিও সরকার বরাবর গুমের দায় অস্বীকার করে আসছে, তবে কিছু কর্মকর্তার পলায়নের পর আওয়ামী লীগের অবস্থানে পরিবর্তন দেখা গেছে। ১৬ এপ্রিল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, “যদি এমন কিছু ঘটেও থাকে, তা হয়েছে সামরিক বাহিনীর নিজস্ব উদ্যোগে—প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার নির্দেশে নয়।”

তবে তদন্ত কমিশনের মতে, এ ধরনের বক্তব্যে বেসামরিক নেতৃত্বের দায় এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং সম্পূর্ণ দায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চাপানো হচ্ছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

কমিশনের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, যারা সরাসরি গুমে অংশ নেননি, তারাও পরবর্তীতে সংশ্লিষ্টদের পলায়নে সহায়তা করেছেন—ফলে তারা দ্বিতীয় স্তরের অপরাধে যুক্ত হয়েছেন। কমিশনের হাতে থাকা নথিতে অন্তত সাতজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলেও সেখানে ‘গুম’ শব্দটি সচেতনভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বরং ‘দুর্নীতি’, ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’ কিংবা ‘রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা’—এই ধরনের শব্দ বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।

এক কর্মকর্তা জানান, গুম বিরোধী মত পোষণ করায় তাকে সহকর্মীদের বর্জন, পারিবারিক নজরদারি ও প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

তদন্ত কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব গুম বা হত্যাকাণ্ড বিচ্ছিন্ন কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং একটি সুসংগঠিত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত কাঠামোর মধ্য দিয়ে এগুলো পরিচালিত হয়েছে—যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা।

আরো পড়ুন