যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক দলের উদীয়মান নেতা ও নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। রিপাবলিকান দলের কয়েকজন নেতা তাঁর নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, মামদানি একজন ‘চরমপন্থী সমাজতন্ত্রী’ এবং নিউইয়র্ক শহরের জন্য হুমকি।
৩৩ বছর বয়সি এই ডেমোক্রেটিক সোশালিস্ট প্রার্থী সম্প্রতি দলীয় প্রাথমিক বাছাইয়ে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন। তাঁর এই বিজয়কে ডেমোক্র্যাটদের জন্য এক বড় রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে এই জয়ের পরপরই নিউইয়র্ক ইয়াং রিপাবলিকান ক্লাব (NYYRC) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লিখেছে, “চরমপন্থি জোহরান মামদানিকে আমাদের প্রিয় নিউইয়র্ক শহর ধ্বংস করতে দেওয়া যাবে না।” তারা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, ম্যাকার্থি যুগের কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগ করে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল ও তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করতে।
রিপাবলিকান নেতারা মামদানির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ এনেছেন। ট্রাম্পের উপপ্রধান স্টাফ স্টিফেন মিলার অভিযোগ করেছেন, “নিউইয়র্ক মামদানির মাধ্যমে দেখছে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হলে কী ঘটে।” তাঁর মতে, মামদানি অভিবাসন আইন বাতিল ও কারা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে চান।
টেনেসির কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি ওগলস মামদানিকে ‘ছোট মুহাম্মদ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “তিনি একজন ইহুদিবিদ্বেষী, সমাজতন্ত্রী এবং নিউইয়র্ক শহরের ধ্বংসের কারণ হবেন।” তিনি মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের দাবিও জানান।
মামদানি যদি নির্বাচিত হন, তবে তিনি হবেন নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেয়র। তাঁর জয়কে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর পর ডেমোক্র্যাটদের প্রথম বড় রাজনৈতিক পাল্টা আঘাত হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসন মামদানির বিজয়কে ‘অবাধ অভিবাসনের ফল’ বলে দাবি করলেও, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। বরং এই অবস্থান থেকে তারা নতুন করে অভিবাসীবিরোধী প্রচারণা ও বহিষ্কার প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নিউইয়র্ক ইয়াং রিপাবলিকান ক্লাব ছাড়াও রিপাবলিকান ফর রিনিউয়াল নামের আরও একটি সংগঠন একই সুরে বলেছে, “কমিউনিস্ট চরমপন্থি মামদানিকে যত দ্রুত সম্ভব ফেরত পাঠানো উচিত।”
এই অবস্থানকে অনেকেই ইসলামবিদ্বেষ ও বর্ণবাদী রাজনীতির প্রকাশ বলে অভিহিত করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির উদারনৈতিক ভাবনা ও নীতি রিপাবলিকানদের কট্টর ডানপন্থী অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়াতেই তাকে টার্গেট করা হচ্ছে।