Ridge Bangla

কুমিল্লা বিশ্বরোডের ইউটার্নে আট মাসে ২০ জনের প্রাণহানী, আহত অর্ধশতাধিক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার ইউটার্ন দীর্ঘদিন ধরেই এক ‘মৃত্যুফাঁদ’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গত আট মাসে এখানে অন্তত ১৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। কারও কারও জীবনে নেমে এসেছে পঙ্গুত্বের কালো ছায়া।

গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে এই স্থানেই ঘটেছে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এতে একসঙ্গে নিভে যায় একটি পরিবারের চার প্রাণ। প্রাইভেটকারে থাকা ওমর আলী (৮০), তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), বড় ছেলে আবুল হাসেম (৫০) ও ছোট ছেলে আবুল কাশেম (৪৫)—চারজনই নিহত হন। ইউটার্ন নেওয়ার সময় দ্রুতগামী এক সিমেন্টবোঝাই লরি উল্টে গিয়ে প্রাইভেটকারটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রাইভেটকারটি লরির নিচে চাপা পড়ে এমনভাবে চ্যাপ্টা হয়ে যায় যে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে গাড়ি কেটে মরদেহ উদ্ধার করে। ফলে এলাকাটি এখন যেন মহাসড়কের ভয়াবহতম দুর্ঘটনার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে—অযথা ইউটার্ন, দ্রুতগতিতে ঘুরতে গিয়ে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারানো, বিপরীত দিকের যানবাহনের সঠিক লেন মেনে না চলা, ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা। ইউলুপ ও আন্ডারপাস প্রকল্প অসম্পূর্ণ থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ইউটার্ন ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে গাড়ি।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ইউলুপ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ এবং আন্ডারপাসের অগ্রগতি মাত্র ২৫ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পগুলো থমকে আছে। প্রতিদিন হাজারো গাড়িকে জীবন বাজি রেখে এই ইউটার্ন ব্যবহার করতে হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, ইউলুপ চালু থাকলে সাম্প্রতিক ভয়াবহ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

শুক্রবারের দুর্ঘটনার পর প্রশাসন পদুয়ার বাজারের ইউটার্ন সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে। এখন থেকে যানবাহন সদর দক্ষিণ উপজেলার দয়াপুর থেকে ঘুরবে। তবে স্থানীয়দের মতে, এটি সাময়িক সমাধান মাত্র। স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও সার্বক্ষণিক তদারকি ছাড়া ঝুঁকি কমবে না।

নিহত চারজনের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে। একসঙ্গে বাবা-মা ও দুই ভাইয়ের মৃত্যুতে গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের মেয়ে হাসিনা বেগম বলেন, “একসঙ্গে চারজনকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা। চিকিৎসা শেষে তারা গ্রামে ফিরছিলেন, কিন্তু আর ফেরা হলো না।”

সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মহাসড়কে সরাসরি ইউটার্ন ব্যবস্থা অনিরাপদ। বিকল্প রাস্তা, ইউলুপ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ছাড়া এসব ইউটার্ন মরণফাঁদে পরিণত হয়।

পদুয়ার বাজারের ইউটার্ন কেবল একটি স্থানের নয়, বরং সারাদেশের মহাসড়ক নিরাপত্তার দুর্বল বাস্তবতা তুলে ধরেছে। অসমাপ্ত প্রকল্প, দুর্বল পরিকল্পনা ও আইন না মানার প্রবণতা মিলেই এক একটি ইউটার্ন হয়ে উঠছে মৃত্যুফাঁদ। গত আট মাসে পদুয়ার বাজারে ১৭টি দুর্ঘটনায় ২০ প্রাণহানি শুধু পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি সংখ্যাই একটি ভেঙে যাওয়া পরিবারের গল্প।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে:

আরো পড়ুন