খাগড়াছড়িতে মারমা সম্প্রদায়ের এক কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে চলমান অবরোধ কর্মসূচি পরিপূর্ণরূপে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে সংগঠনের মিডিয়া সেলের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সংগঠনটির ফেসবুক পেজে রাত ১১টা থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রশাসনের আশ্বাস এবং শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতি সম্মান জানিয়ে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ বন্ধ থাকবে।
তখন তারা ঘোষণা দেয় যে, যদি তাদের দেওয়া আট দফা দাবি পূরণ না হয় তাহলে পুনরায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ চালিয়ে যাওয়া হবে। এবার প্রশাসনের আশ্বাস, জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করে সংগঠনটি পুরোপুরি অবরোধ প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুণ্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং প্রশাসনের দেওয়া আশ্বাস বিবেচনায় অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জানা যায়, খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে জুম্ম ছাত্র-জনতা জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক দফায় বৈঠক করে। বৈঠকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, নিহতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারসহ আট দফা দাবি জানানো হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হলে সংগঠনটি তাদের কর্মসূচি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার প্রতিবাদে ২৭ সেপ্টেম্বর অর্ধদিবস অবরোধ চলাকালে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে গুইমারা উপজেলায়। যেখানে সংঘর্ষে তিনজন পাহাড়ি যুবক নিহত হন এবং সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয়রা আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর, দোকান ও সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সহিংসতার পর জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে এবং পরবর্তীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এদিকে, জেলা প্রশাসন পরিষদের পক্ষ থেকে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাগুলোর তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, যে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে তার শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনটি মামলা করেছে, যাতে এক হাজারেরও বেশি অজ্ঞাতনামা আসামি রয়েছে।