Ridge Bangla

ইউআইইউ আন্দোলন: পুলিশের লাঠিচার্জেও অনমনীয় শিক্ষার্থীরা, অবশেষে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

শনিবার, ২১ জুন, সকাল থেকে ঢাকার নতুনবাজার এলাকায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)-র শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ২৬ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে সকাল সোয়া ৮টা থেকে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। তারা ‘বহিষ্কার প্রত্যাহার’ ও ‘প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা’র প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। কিন্তু সকাল ৯টার দিকে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে চাপ দেয় এবং বেলা ১১টার আগে লাঠিচার্জ করে জোরপূর্বক সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।

ছবি: সংগৃহীত

আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, “আমরা কোনো সহিংসতা করিনি। পুলিশ কোনো সতর্কতা ছাড়াই আমাদের মারধর করে সরিয়ে দেয়।”

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পুনাব) এর লিড অর্গানাইজিং সেক্রেটারি নাজমুল আহসান এই হামলার ব্যাপারে তার ফেসবুক একাউন্টে লিখেছেন, “UIU এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে Private University National Association of Bangladesh – PUNAB অংশগ্রহণ করে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ বাধা দেয় এবং শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। উক্ত হামলায় PUNAB এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লাবিব মুহান্নাদ ভাই গুরুতর আহত হন। এছাড়াও তারা একজন নারী শিক্ষার্থী যিনি বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় মেম্বার মাহমুদা সুলতানা রিমি, তাকে পাড়ানো হয় এবং ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীর হাত ভেঙ্গে যায়। আমরা UIU এর শিক্ষার্থীদের পাশে আছি, ছিলাম এবং থাকবো। শিক্ষার্থীদের ঠিক দাবিতে পুলিশের উক্ত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং জড়িতদের অবিলম্বে বিচার এর দাবি জানাই।”

আহত লাবিব মুহান্নাদ

উল্লেখ্য, ২৬ এপ্রিল ইউআইইউতে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে উপাচার্যসহ ২৪ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন এবং ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে অনলাইন ক্লাস চালু হলেও অনেক শিক্ষার্থী তা বর্জন করেন এবং সরাসরি ক্লাস ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতা চান।

এর মধ্যেই ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৪১ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়, যার মধ্যে ২৪ জনকে স্থায়ী ও ১৬ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

নতুন বাজারে সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা

২১ জুন সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাত ৮টার মধ্যে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম দেন এবং সড়ক ছেড়ে দেন।

অবশেষে আন্দোলনের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাত ৮টার দিকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। জনসংযোগ শাখার পরিচালক আবু সা-দাত মো. মুনতাসিরবিল্লা জানান, “স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রেও সময়সীমা নির্ধারণ করে ক্লাসে ফিরতে বলা হয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:

১. অন্যায়ভাবে’ বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. বহিষ্কারের সঙ্গে সাথে জড়িত ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৩. ইউআইইউতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম-অসুবিধা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে যেসব সংস্কার দাবি করা হয়েছে, সেই সব বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৫. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিল করতে হবে।

এই পোস্টটি পাঠ হয়েছে: ১০

আরো পড়ুন