চলতি আগস্টের প্রথম ১০ দিনে দেশে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) হিসাব অনুযায়ী, জানুয়ারি হতে জুলাই পর্যন্ত দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৭৮ জন।
আগস্টের প্রথম ১০ দিনের পর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৭। আহতের সংখ্যা ২৬৬। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১১১ জন মব সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন।
অতি সম্প্রতি, গত ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জে মেয়ে বিয়ের জন্য দিনক্ষণ পাকা করতে গিয়ে চোর সন্দেহে দুইজন (জামাই-শ্বশুর) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একই দিনে মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে মারধর করে একজনের চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
ঘটনার ধরনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগস্টের প্রথম ১০ দিনের ১৩টি গণপিটুনির ঘটনার মধ্যে ৮টি চোর সন্দেহে, বাকিগুলো চাঁদাবাজি, পূর্বশত্রুতা এবং নানাবিধ বিরোধের কারণে ঘটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাজ্জাদ সিদ্দিকীর মতে, বিচারহীনতা বাড়লে মানুষও সহিংস হয়ে ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক, কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মব হামলা হচ্ছে।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ দুর্বল। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিআইজিডি’র (ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) ‘পালস সার্ভে ৩’ শিরোনামের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৮০% মানুষ। একইভাবে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৬%, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬১%, এবং পোশাকের কারণে হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬৭% মানুষ।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশের দুর্বলতা, বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নৈতিক সংকট—সব মিলিয়ে মব সহিংসতা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। সমাজ সচেতন নাগরিকরা দেশের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।